নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশুর রোগ প্রতিরোধ এবং শিশুকে অপুষ্টি ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে আগামী ১ জুন জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-১১ এবং ১২-৫৯ মাসের বয়সী ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ১’শ ৭৯ জন শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াবে চট্টগ্রাম জেলা ও নগর। এর মধ্যে জেলায় ৮ লাখ ৩২ হাজার ১’শ ৭৯ জন শিশু এবং নগরে রয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার শিশু। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুর ২টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা সিভিল সার্জন ও সকাল ১১টায় চসিক জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন রানা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান।
এসময় প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন শিশুর রাতকানা রোগ প্রতিরোধ এবং শিশুকে অপুষ্টি ও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবে। এর মধ্যে ৬-১১ মাসের ৮৫ হাজার শিশুকে একটি করে নীল (১ লাখ আইইউ) এবং ১২-৫৯ মাসের ৪ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে একটি করে লাল রঙের (২ লাখ আইইউ) ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। পাশাপাশি মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা) ও হলুদ ফলমূল ও রঙিন শাক এবং জন্মের পর এক ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে শাল দুধ ও ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর বার্তা প্রচার করা হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, চসিকের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, ডা. টি চক্রবর্তী, সুমন তালুকদার, হাসান মুরাদ চৌধুরী, জুয়েল মহাজন, আকিল মাহমুদ নাফে, আবু সালেহ, হোসনে আরা, দিদারুল মুনির রুবেল, শাহনাজ আকতার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ।
অন্যদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-১১ মাস বয়সী মোট ৯৪ হাজার ১৯৫ জন শিশুকে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানো হয়েছিল, চাহিদা ছিল ৯৬ হাজার ৭৯০ জন, যার অর্জিত হার ৯৭ শতাংশ এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭ লাখ ২১ হাজার ৫১৫ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানো হয়েছিল, চাহিদা ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৫ জন, যার অর্জিত হার ৯৮ শতাংশ। তিনি বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর অপুষ্টি, অন্ধত্ব প্রতিরোধ, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত, হাম ও ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার হ্রাসসহ সকল ধরণের মৃত্যুর হার হ্রাস করে। পরিবারের রান্নায় ভিটাামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহার শিশুর জন্য যথেষ্ট উপকারী। মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্র্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে দিতে হবে। শিশুর জন্মের সাথে সাথে মায়ের বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে এবং ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু দেয়া যাবে না। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণমত ঘরে তৈরি পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। কোন শিশু ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো থেকে যাতে বাদ না যায় সে দিকে সবাইকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলার বাইরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য এ ক্যাম্পেইন সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। আগামী ১ জুন শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলাগুলোতে ১৭টি স্থায়ী কেন্দ্র, ১৫টি ভ্রাম্যমান কেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮’শটি অস্থায়ী কেন্দ্রে ৫২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১৫৮ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৪৮০ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৭২০ জন পঃ পঃ সহকারী, ১৯৬ জন পঃ পঃ পরিদর্শক, ৯ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক, ১৪ জন স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, ৫২৯ জন সিএইচসিপি ও ৮৩ জন স্যাকমো জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে নিয়োজিত থাকবে। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। তিনি বলেন, এ কর্মসুচী সফল করতে সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৬-৫৯ মাস বয়সী সকল শিশু যাতে ঐদিন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাসসুল পায় সে লক্ষ্যে সর্বত্র মাইকিং করে জনগণকে জানান দেয়া হবে। ভ্রমণে থাকাকালীন সময়েও রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, ফেরী ঘাট ও লঞ্চ ঘাটে অবস্থিত টিকা কেন্দ্রসহ যে কোন টিকাদান কেন্দ্র থেকে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে পারবে। জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে সরকারী প্রতিষ্টান, জনপ্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি ও এনজিও সংস্থাগুলো কাজ করবে। সরকারী কর্মকর্তা, মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শিশুদেরকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে এ কর্মসূচী সফল হবে।
ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার ও এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান।